মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম, লামা ::
বিদ্যুতের ভেলকিবাজি, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন লামা, আলীকদম ও চকরিয়া উপজেলা কিছু অংশের বিদ্যুৎ গ্রাহকরা। স্থানীয় বিদ্যুৎ গ্রাহকদের অভিযোগ, লামা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দায়িত্বে অবহেলা, অনিয়ম, দুর্নীতি ও নিজেরা বিদ্যুৎ চুরির কারণেই বিদ্যুত নিয়ে গ্রাহকদের এ ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে লামা বিদ্যুৎ বিভাগ।
ভুক্তভোগীরা জানায়, দিনে কয়েক শতবার বিদ্যুৎ যায় আর আসে। সামান্য বৃষ্টি কিংবা হালকা বাতাসের অযুহাতেই পুরো তিন উপজেলা অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে ঘন্টার পর ঘন্টা। কখনো কখনো একটানা ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বিদ্যুৎবিহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত থাকে আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয় লামা বিদ্যুৎ বিভাগের আওতাধীন এলাকাসমূহ। লামা আবাসিক প্রকৌশলীর কার্যালয়ের মাধ্যমে পার্বত্য লামা ও আলীকদম উপজেলা এবং পাশের চকরিয়া উপজেলার মানিকপুর ও বমুবিলছড়ি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়ে আসছে। লোডশেডিং এর নামে দিনভর বিদ্যুৎ না থাকা, আবার মাঝে মধ্যে আসার ভেলকিবাজিতে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে গ্রাহকরা। ভেপসা গরমে বিদ্যুতের এ ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে।
লামার বিদ্যুৎ গ্রাহক আনোয়ার হোসেন, আলীকদমের আব্দুল মতিন ও চকরিয়া উপজেলার বমুবিলছড়ি ইউনিয়নের মোঃ আলমগীর হোসেন অভিযোগ করে বলেন, সামান্য বৃষ্টি কিংবা হালকা বাতাস বয়ে যাওয়ার অযুহাতে বিদ্যুৎ চলে গিয়ে পুরো উপজেলা দু’টিসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা বিদ্যুৎ বিহীন অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। এ অবস্থায় যদি বজ্র বৃষ্টি, সাথে সামান্য ঝড়ো হাওয়া হয়, তা হলে তো কথাই নেই। কখনো কখনো একটানা তিন দিন পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ দেয়া হয়না। এসময় দু’উপজেলা এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা সমুহের ফ্রিজ, রেফ্রিজারেটর ব্যবহারকারীদের দুর্ভোগ চরমে উঠে। এ অবস্থার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগের লোকজন সড়কের পাশের গাছ পালাকে দায়ী করে সোজা উত্তর দেয়। লামা হাসপাতালের ভর্তি রোগীরা জানায়, বিদ্যুৎ না থাকার কারণে আমাদের অসুস্থ শিশুদের গ্যাস দিতে পারিনা। প্রচন্ড গরমে অতিষ্ট হয়ে পড়ে সেবা নিতে আসা লোকজন।
অফিস সূত্রে জানা যায়, সড়কের পাশের গাছ কাটার জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও লামা বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে বরাদ্দকৃত টাকার সিকিভাগ কাজও বাস্তবায়িত হয় না। নাম মাত্র কিছু ঢালপালা কেটে দিয়ে তাদের দায়িত্ব শেষ করেন। ফলে বিদ্যুৎ লাইনের ওপর গাছ পালা ভেঙ্গে পড়ে। সম্প্রতি একটানা তিন দিন বিদ্যুৎ বিহীন হয়ে পড়লে লামা উপজেলা পরিষদ চত্বরে শত শত লোক জড়ো হয়ে বিক্ষোভ প্রকাশের চেষ্টা করলে, উপজেলা প্রশাসন আশার বাণী শুনিয়ে তাদের শান্ত করে। পরবর্তীতে উপজেলা আইন শৃংখলা সভায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের গতানুগতিক জবাব দিয়ে উপস্থিত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়েন লামা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ অলিউল ইসলাম।
লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার প্রায় ৩ কোটি ২০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে লামা বিদ্যুৎ বিভাগের অধীন ৩৩/১১ কেভি বিদ্যুৎ সরবরাহ উপকেন্দ্র স্থাপন করে। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুরোদমে চালু হলে এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকদের বিদ্যুৎ প্রাপ্তিতে ভোগান্তি লাঘব, লো-ভোল্টেজ এবং লোডশেডিংয়ের কবল থেকে মুক্তি পায়নি। বিশ্বস্থ সূত্র জানায়, অর্থবহ উদারতা ও ব্যাক্তিগত সুবিধা নিয়ে পুরোপুরি কাজ শেষ না হওয়ার ঠিকাদার থেকে অসম্পন্ন উপকেন্দ্র বুঝে নেয় লামা বিদ্যুৎ বিভাগ। এই উপকেন্দ্রে ৫টি ফিডার লাইন রয়েছে। ফিডার লাইনগুলোতে ব্যবহৃত এসিআরগুলো ঠিকভাবে কাজ করছে না। যার ফলে একটি ফিডার লাইনে কোন সমস্যা হলে, সকল ফিডার লাইন এক যোগে সমস্যার সৃষ্টি করে। এতে করে পুরো এলাকার বিদ্যুৎ গ্রাহকরা ভোগান্তি পড়ে।
লামা বিদ্যুৎ বিভাগের আবাসিক প্রকৌশলী মোঃ অলিউল ইসলাম সাংবাদিককে জানান, দোহাজারী থেকে লামা বিদ্যুৎ বিভাগের নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে। সেখান থেকেই লোডশেডিং করা হয়। এছাড়া পর্যাপ্ত ঢাল-পালা কাটার পরেও সড়কের পাশে তারের উপর বিভিন্ন সময় গাছরে ঢাল-পালা পড়ে লাইন বন্ধ হয়ে যায়। এসকল গাছের ঢাল-পালা কাটার জন্য নতুন করে বরাদ্দ চেয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। লামায় সার্বক্ষনিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট বিভাগ নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করছে।
পাঠকের মতামত: